ধারাবাহিক- অজানা অভিশাপ (পর্ব-২)

অজানা অভিশাপ (পর্ব-২)
-সুপর্ণা নাথ

 

 

তিয়াসের ফ্লাইট লেট করেছে তাই পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে গেলো। এসেই হৈ চৈ করে বাড়ি মাথায় করলো। মারিয়ানা অদ্রিয়ানোর সাথেও খুব জলদি মিশে গেলো। আজ আমার বাড়িটা সত্যি যেন প্রাণ পেলো। নিজের রুমটা দেখে ওর খুব পছন্দ, বললাম
– রাতে কিছু বুঝবি না, সকাল হতে দে, ব্যালকনির ভিউটা জাস্ট ব্রেথ টেকিং!
– মা, আমি যে কি এক্সসাইটেড কি বলবো; তবে খুব হিংসে হচ্ছে জানো তো আমি মোটে কয়েক সপ্তাহ আর তোমরা গোটা তিনটে মাস থাকতে পারবে (কপট রাগে ঠোঁট ফোলায় ও)।
– তোকে কে বলেছে ফিরে যেতে? Quit that Job কলকাতাতে কিছু একটা ঠিক মনের মতো পেয়ে যাবি দেখিস।
– আবার শুরু করলে! আমি আর দু’বছরের মধ্যেই তোমাদের কাছে ফিরে আসবো মা।
বলেই ছোট বেলার মতো আমার কোলের মধ্যে মাথা গুঁজে দিলো।

রাতে ডিনার টেবিলে অনেকক্ষণ গল্প আড্ডা হলো। মারিয়ানার দেখলাম আজ বাড়ি যাওয়ার তাড়া নেই। অনেকটা রাত হয়ে যাওয়াতে আর মারিয়ানার অস্বাভাবিক ভূতের ভয়ের কারণে ওকে রাতে থেকে যেতে বললাম। ও এক কথায় রাজি। রাতে অরি ঘুমোতে যাওয়ার পর মা আর মেয়েতে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম তিয়াসের ঘরে বসে।
সময়টা হেমন্ত কাল আর পাহাড়ি জায়গা তাই একটা শিরশিরে ঠান্ডা ভাব থাকে রাতের দিকে।মেয়ে তার বাবার ধাত পেয়েছে, দিনে অজস্র বার কফি খাবে মানা করেও পারিনা। মারিয়ানা রান্না ঘর গোচ্ছাছিলো। তিয়াস কফির কথা বলছে শুনে নিজেই এক কাপ করে নিয়ে এলো, কিন্তু সে ঘরের ভেতর ঢুকতে নারাজ। তিয়াস ওর ভুতের ভয়ের কথা কিছুটা শুনেছিল, তাই হাসি মুখে ওর হাত ধরে ঘরে নিয়ে এলো। বললো,
– তুমি আজ আমার সাথে থাকো না, গল্প করতে করতে ঘুমোবো।
মারিয়ানার মুখ নিমেষে কাগজের মতো সাদা হয়ে গেল।
সে কিছুতেই রাজি হলো না। আমি তিয়াসকে ইশারায় বারণ করলাম যাতে জোর না করে। তবে এবার আমি অদ্রিয়ানোর কথা অনুসারে মারিয়ানার ভয় পাওয়াটাকে ব্যঙ্গ করতে পারলাম না। একটি কুড়ি-বাইশ বছরের মেয়ে এভাবে কি ছোট বাচ্চাদের মতো ভয় পেতে পারে?
বিষয়টা আমাকে ওর থেকে জানতে হবে।

সকাল বেলা ব্রেকফাস্ট করতে করতে গল্প করছি। অরি আজ ছুটি নিয়েছে। অদ্রিয়ানো আজ আমাদের আশপাশটা ঘুরিয়ে দেখাবে, একটু বাদেই হয়তো এসে পড়বে। তিয়াস বললো,
– সত্যি মা সকালে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে মনে হলো স্বর্গে এসে পড়েছি ! কি অপূর্ব সিনিক বিউটি! পাহাড় জঙ্গল ঝর্ণা …. শুধু ওই বাড়িটা কেমন যেন খাপ ছাড়া।
অরি বললো,
– ওই নীল বাড়িটা? ওরাই আমাদের এক মাত্র পড়শী। আর তো বাড়ি নেই না …
তিয়াস একটু ভুরু কুঁচকে অবাক হয়ে বলল
– ধুর, নীল বাড়িটা তো left hand সাইডে, ওটার কথা কেন বলবো? ওটা কি বাড়ির পেছনের ব্যালকনি দিয়ে দেখা যায় নাকি!
আমি অবাক হয়ে বললাম,
– পেছনের জঙ্গলে বাড়ি! কি বলছিস কি তুই?
আমরা এই কদিনে কোনো বাড়ি তো দেখিনি!
ও আমাদের দু’জনের হাত ধরে টেনে উপরে নিয়ে চললো। অরি এ ঘরে খুব বেশি আসেনি তাই ওর না খেয়াল করাটা স্বাভাবিক কিন্তু আমি তো …. কাঁচের দরজা খুলে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখালো; আমি অবাক সত্যিই তো একটা বাড়ি আছে কিন্তু পাইন গাছের গুঁড়ির পিছনে কাঠের বিশাল জীর্ণ বাড়িটা কি ভাবে যেন Camouflage হয়ে আছে , চোখেই পড়েনি! দৌড়ে আমাদের রুমের ব্যালকনিতে গিয়ে দেখলাম এখান থেকে একটু কোনাকুনি হওয়ার কারণে বাড়িটার অস্তিত্ব একদমই বোঝা যায় না।
অরি বললো,
– মাম্মা তুই তো এসেই দারুন জিনিস আবিষ্কার করে ফেললি। একদিন তুই আর আমি দু’জনে ওই দিকটায় ঘুরে আসবো বেশ ট্রেকিং এর মত হবে, কি বলিস?
-দারুণ হবে বাবা; কবে যাবে বলো?
আমি ওদের থামিয়ে বললাম,
-একদম না, বাড়িটা কিন্তু বেশ দূরেই, আর ওদিকে রাস্তা ঘাট তেমন নেই সাথে জঙ্গলটাও গভীর, সাপ খোপ না জানি কি আছে, কোনো দরকার নেই। ট্রেক করতে হলে অদ্রিয়ানোকে বলো, যেখানে সবাই যায় সেখানে যাও।
অরি কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো,
-জো হুকুম রানী সাহেবা।
মারিয়ানা এতোক্ষণ কিছু বলেনি, খুব ক্ষীণ স্বরে বললো,
– ওটা, Casa de Monte, ওটা কার্সড। অভিশপ্ত ওখানে যাবেন না প্লিজ।
তিয়াস কি একটা জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল, কিন্তু কথার মাঝেই অদ্রিয়ানো চলে এলো আমাদের নিয়ে যেতে, ও কিছুটা কথা শুনেছিল, বললো,
– অভিশপ্ত না আরও কিছু, কিছু না ম্যাডাম, বহু পুরোনো বাড়ি কয়েকশো বছরের পুরনো। যতদূর শুনেছি আড়াইশো বছরেরও বেশি। ওটা কিন্তু কোনো পর্তুগিজের বাড়ী না, তবে বাড়ির মালিক নাকি খুব ধনী ছিল। বেশি কিছু জানি না তবে ওর মালিকের সাথে নাকি এখানে লোকেদের কি সব ঝামেলা হয়, বাড়ির মালিক এখান থেকে পালিয়ে বাঁচে, সেই থেকে বাড়ি ফাঁকা।
তিয়াস বললো,
– মারিয়ানা তো বললো, casa de monte…. মানে কি কথাটার?
– Casa de Monte মানে হিল হাউস।
শুনেছি পাহাড়ের এত উপরে প্রথম ওই বাড়িটাই হয়েছিল তাই এখানের মানুষজন ওটাকে casa de monte (হিল হাউস) বলতো।
আর ওসব অভিশাপ টাপের গল্প মারিয়ানাই বলতে পারবে। ওর গ্র্যানি তো বংশ পরম্পরায় ওঝা গুনীন আর হাতুড়ে ডাক্তার তাই ওসব ওই ভালো জানবে।

আমি জানি কথাটা ব্যঙ্গ করে বললো অদ্রিয়ানো। কিন্তু মারিয়ানার চোখে মুখে যেন এক করুণ আকুতি!

আমরা day out এর জন্য তৈরি। বেরিয়ে পড়লাম। সারাদিন Frontainhas এর বিভিন্ন গলিতে ঘুরে বেড়ালাম। কি অপূর্ব শহর, উজ্বল রঙের অভিজাত ভিলা, ঝকঝকে রাস্তাঘাট, বাড়ির পাঁচিলের বেড়াজাল টপকে কিছু ফুল আর ফলের গাছ উঁকি মারছে। রাস্তায় দেশ বিদেশের ট্যুরিস্ট।
বাজারটাও ভারী চমৎকার। মন ভরে শপিং করলাম। আর পেট ভরে লাঞ্চ করলাম স্টিমড রাইস আর চিকেন ভিন্দালু দিয়ে। প্রায় সন্ধ্যের মুখে বাড়ি ফিরলাম। মারিয়ানার আজ ছুটি, আর দারওয়ানজিকেও সপ্তাহ খানেকের ছুটি দিয়েছি। বাড়িতে এতোজন আছি, বুড়ো মানুষটা একটু অবসর পাক।
অদ্রিয়ানো আর ভেতরে এলো না। আমরাও খুব ক্লান্ত, ফ্রেশ হয়ে সবাই একটু রেস্ট নেব ঠিক করলাম। হালকা একটু ডিনার করে নিলাম তাড়াতাড়ি তার পর টানা ঘুম।

হঠাৎ তিয়াসের ডাকে ঘুম ভাঙে,
– আমরা ঘরে একটু এস তো মা,
– কেনরে? কি হয়েছে?
– এসোই না।
– উফফ চল ..
ওর ঘরে এসে ও ব্যালকনির দিকে দেখিয়ে বললো, – ওই বাড়িটাতে লোক থাকে গো মা
– ওই ভাঙা চোরা বাড়িতে কেউ থাকতে পারে?
– বিলিভ মি মা, আমি ঘুমাচ্ছিলাম তারপর টয়লেটে যাওয়ার জন্য উঠলাম, এসে আবার শুতে যাবো তখন দেখলাম ওই বাড়ির জানলার সামনে থেকে কে যেন সরে গেলো। ভেতরে হালকা মলিন হলুদ একটা আলো জ্বলছিল।
– এত দূর থেকে কি দেখতে কি দেখেছিস। যা ঘুমিয়ে পড়।

পরের বেশ কয়েকদিন খুব ভালো কেটে গেলো। তিয়াসকে আমি কাছে পাই না তাই এই কয়েকদিনের প্রতিটা মুহূর্ত দারুণ ভাবে উপভোগ করতে চেষ্টা করছি। অরি কাজে ব্যস্ত থাকলেও মেয়ের জন্য ঠিক সময় বের করছে। তবে এর মাঝে আরো দু’ তিন বার ও বলেছে ওই বাড়িতে কেউ থাকে, এবং একবার নাকি ওর সাথে চোখচোখিও হয়েছে। আমি বিভিন্ন সময় ওর ব্যালকনি থেকে দেখার চেষ্টা করেছি, সত্যি বলতে অত ঝোপ ঝাড় আর পাইন গাছের পেছনে বাড়িটা ঠিক মতো বোঝাই যায় না, আর যেটুকু দেখা যায় সেটা অতি জীর্ণ। তবে হ্যাঁ, বাড়ির দোতলার একটা জানলা সরাসরি চোখে পড়ে। তবে ওই বাড়ি মনুষ্যবাসের অযোগ্য এটা যে কেউ মানবে।

পরদিন সকালে তিয়াস হঠাৎ একা বেরিয়ে গেলো। বললো মার্কেটে যাচ্ছে। কিছু পরে ফিরে এলো দেখলাম একটা বাইনোকুলার কিনে এনেছে। তারপর সোজা নিজের ঘরে চলে গেলো। এবার বিষয়টা আমাকে ভাবাচ্ছে, ও দিন দিন ওই বাড়ির প্রতি অবসেসড হয়ে পড়ছে। এটা ঠিক না । অরিকে বলতে ও বললো
– ছক বাঁধা জীবনের বাইরে অন্য রকম কিছু পেয়েছে তাই নিয়ে মেতে আছে, বাদ দাও না। ওকে ওর মতো ছেড়ে দাও।

ছাড়তে পারলে খুশিই হতাম, কিন্তু আমি তো মা, মেয়ের ছোট ছোট চেঞ্জও আমার চোখে বাঁধে।
এখন দিনের বেশির ভাগ সময় ঘরের ওই কাঁচের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, এক দৃষ্টিতে ওদিকে তাকিয়ে থাকে। সব সময় কিছু যেন একটা বিষয় চিন্তা করছে।
মারিয়ানা বিষয়টা লক্ষ্য করেছে, ও বলল,
– দিদিকে ওই রুমে রেখো না ম্যাডাম, ও বাড়িটা অভিশপ্ত, জাদু করতে পারে মানুষের উপর।
এবার আমার সত্যি ভয় করতে শুরু করেছে।
আমি তিয়াসকে নিচের ঘরে শিফট করতে চাইলাম কিন্তু ও রাজি হলো না। বললো,
– তুমি ভাবছো আমি অদ্ভুত আচরণ করছি। তা নয় মা। ওই বাড়ি আর বাড়ির ভেতরের মানুষটার সম্পর্কে আমাকে জানতেই হবে।
-তিয়াস এবার আমার বিরক্ত লাগছে। যে খুশি থাক ওখানে, বলা যায় না কোনো আন্টি সোশ্যাল ডেরা বানিয়েছে ওখানে, ফালতু ঝামেলায় জড়াস না সোনা।
– এক্সাক্টলি মা, আমিও এটাই ভেবেছিলাম কিন্তু তাহলে সারাদিনে বা এতগুলো দিনে তাদের একবারও বাড়ি থেকে বেরোতে তো দেখবো? তাই না? কেউ বেরোয় না। তবে ওখানে যে থাকে সে সারারাত কাল আমার ঘরের দিকে চেয়ে ছিল।
– তুই নিচের ঘরে থাকবি আজ থেকে, আমিও তোর সাথে থাকবো। মারিয়ানা বলেছে …
– (মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বলে) ওর কথা রাখো তো। খালি অন্ধ বিশ্বাস ওর। আমি কাল সকালে একবার ওদিকে ঘুরে আসবো?
– একদম না কোনো দরকার নেই।
– ও.কে.. ও.কে যাবো না ।
আমার মনে কাঁটা বিঁধেই থাকলো, আমি জানি তিয়াসের জেদ কতটা। সেদিন বিকেলে অরির এক কলিগের বাড়িতে নিমন্ত্রণ ছিল, তিয়াস কিছুতেই যেতে চাইলো না।

আরো চার দিন কেটে গেছে, তিয়াস ও বিষয় আর কোনো কথা বলেনি। ওর মুড একটু অফ আছে কয়েকদিন, হয়তো অর্কর সাথে ঝামেলা হয়েছে। আমি আর ঘাটালাম না ওকে।

ভেবে খুশি হলাম যে ওই বাড়ির রহস্যর ভূত ওর মাথা থেকে নেমেছে। দারওয়ানজি কাল ফিরে এসেছে। ওদের বাড়ি পাহাড়ের পুবের ঢালের বস্তিতে। বাড়িরতে সব ভালো কিনা খোঁজ নিতে বললো,
– বস্তিতে এক পুরোনো উপদ্রব শুরু হয়েছে।
– কিসের উপদ্রব?
– অশুভ ছায়ার।
– মানে!
– সে বহুকাল আগের কথা আমার দাদাজিও জন্মায়নি তখন। এক অশুভ ছায়ার প্রভাবে গ্রামের পালিত পশু সব মারা পড়ছিল। শেষে বেশ কজন মানুষকেও সেই অশুভ ছায়ার শিকার হতে হয় তারপর এখানকার প্রিস্ট অনেক চেষ্টায় তাকে দূর করে। কিন্তু গত তিন দিনে আবার গ্রামের রাস্তা ঘাটে মৃত পশুর দেহাংশ আর রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে।
পুলিশে রিপোর্ট করার কথা জিজ্ঞেস করতে বললো,
– এ পুলিশের কাজ না ম্যাডাম। কি জানি আবার কত সর্বনাশ হবে!
আমি চাইনা কথাটা তিয়াসের কানে যাক। কে জানে এবার হয়তো এইটা নিয়ে পড়বে।

পরদিন সকালে আমাদের প্রতিবেশী সেই নীল বাড়িতে খুব হট্টগোল শুনছিলাম। তেমন পরিচয় হয়নি তাই আগ বাড়িয়ে যেতে পারলাম না। মারিয়ানাই খবরটা দিলো, ওটা ডিসুজাদের বাড়ি ওদের বাড়িতে তিনটে বিশাল Husky dog পেট ছিল । সারা দিন বাঁধা থাকলেও রাতে বাড়ির কম্পাউন্ডের ভেতর তাদের ছেড়ে রাখা হতো। চোর ডাকাতও বাড়ির ত্রিসীমানায় যেতে ভয় পায়। কিন্তু আজ সকালে … সকালে…. ওর চোখে মুখে মারাত্মক আতঙ্কের ছাপ।
– আহ্, কি আজ সকালে বলবে পরিষ্কার করে..
– আজ তিনটি Husky-কেই কেউ বা কারা ছিন্ন ভিন্ন করে আধখাওয়া করে রেখে গেছে। কি মারাত্মক দৃশ্য।
-;Husky তো শিকারি কুকুর খুবই শক্তিশালী। তাহলে বড় কোনো পশু কি!
– Altinho hill এ তেমন কোনো পশু বা হিংস্র জন্তু নেই ম্যাডাম।
খুব চিন্তায় পড়া গেলো। আমি মারিয়ানাকে বললাম,
– তিয়াস যেন এসব কিছু জানতে না পারে।
অরিকে সংক্ষেপে সবটা বললাম, আর সন্ধ্যের আগেই ফিরে আসতে বললাম। তিয়াস এখনো ঘুমোচ্ছে অনেক বেলা হলো, গত কয়েকদিন ধরেই খুব বেলা করে উঠছে, চুপচাপ থাকছে। নিশ্চয়ই অর্কর সাথে কিছু হয়েছে। চার-পাঁচ দিন আগেও তো বেশ ছিল ও। অর্ক ওর ফিয়ান্সে, এক সাথেই কাজ করে, আমাদের দু’বাড়ি থেকে সব ঠিক হয়ে আছে। সাত পাঁচ ভেবে অর্ককে ফোন করলাম, সে জানালো গত পাঁচ দিন ধরে তিয়াসের সাথে ওর কথাই হচ্ছে না। ও নাকি নম্বর ব্লক করেছে, কিন্তু ওদের কোনো ঝগড়াও হয়নি। শেষ যেদিন কথা হয় সেদিন তিয়াস খুব এক্সইটিং কিছু বলবে বলেছিল। ওর হলিডে দারুন কাটছে সেটাও বলেছিল।
-এক্সাক্টলি কি এক্সইটিং ঘটনা সেটা কি তোমাকে বলেছিল অর্ক?
– না আন্টি, দুপুরের দিকে কথা হয়েছিল, বলেছিল রাত এ সব বলবে, খুব রোমহর্ষক ব্যাপার নাকি!
– ওহ্
– কিছু হয়েছে কি? আমি তো বুঝতে পারছি না আন্টি ঠিক কেন ও হঠাৎ …
– ও.কে, চিন্তা করোনা, ও ঠিক আছে আমি কথা বলছি।

ফোন রাখার পর অনেকগুলো অদ্ভুত চিন্তা আর প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে লাগলো, হঠাৎ সব কিছু যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। অনেক বেলা হলো এবার ওকে ডাকা দরকার। দেখলাম ও নিচে আসছে।
মুখটা ভারী লাগছে, চোখগুলো যেন কেমন নিষ্প্রভ, প্রাণহীন। আমার মনটা বড্ড খারাপ লাগছে। ব্রেকফাস্টটা এগিয়ে দিয়ে মাথায় গায়ে হাত বুলিয়ে বললাম,
– কি হয়েছে রে, বলবি?
– নাথিং, কি হবে? একটু টায়ার্ড লাগছে, মে বি ওয়েদার চেঞ্জ এর জন্য।
কথাগুলো কেমন কাঠ কাঠ ভাবে বলেই উঠে গেলো। খাবারগুলো নাড়াচাড়া করলো শুধু, খেলনা কিছুই।
দুপুরে লাঞ্চের সময় নামলো কিন্তু ওর ফেভারিট খাবার থাকা সত্তেও কিছুই সে ভাবে খেলো না। এবার সত্যি চিন্তা হচ্ছে। কথাবার্তা বলছে না, আবার ঘরে গিয়ে দরজা দিলো।

মারিয়ানাকে ঘর পরিষ্কারের জন্য ঢুকতে দেয়নি। বিকেলের দিকে কিছু ফল নিয়ে ওর ঘরে গেলাম যদি কিছু খায়, ঘরের দরজা খুলে দেখলাম সারা ঘর অন্ধকার, জানলার পাল্লা বন্ধ ব্যালকনির কাঁচের দরজার উপর পাতলা আসমানী পর্দা, তার উপর দিয়ে একটা মোটা বেডশিট টাঙিয়ে দিয়েছে যাতে ঘরে মোটেও আলো না আসে, ও কি ওই বাড়িটাকে …. ভয় পাচ্ছে কি কোনো কারণে? আগে খালি বলছিল কে যেন ওই বাড়িতে থাকে, আমরা গা করিনি, তারপর আর কিছু বলেনি … বড় হয়েছে, বার বার অবিশ্বাসটা নিতে পারেনি তাই চেপে যাচ্ছে বিষয়টা তবে কিছু একটা ওকে কুরে কুরে খাচ্ছে। আমাকে জানতেই হবে।

চলবে….

Loading

Leave A Comment